রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৮ অপরাহ্ন

ধর্ম পরিবর্তন করে হিন্দু কিশোরীকে বিয়ে, টেনেহিঁচড়ে ফেরত

ধর্ম পরিবর্তন করে হিন্দু কিশোরীকে বিয়ে, টেনেহিঁচড়ে ফেরত

স্বদেশ ডেস্ক:

ভোলার দৌলতখানে কামরুল ইসলামের সদ্য মুসলিম হওয়া স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউসকে পুলিশের মাধ্যমে হিন্দু বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিলেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার চরখলিফা ইউনিয়নের দিদার উল্যাহ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

কামরুল ইসলাম ওই গ্রামের দিনমজুর আলী হোসেনের ছেলে। কামরুল জানান, দুই বছর আগে ঢাকার গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার নীলের পাড়ায় একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে গিয়ে সংকর চন্দ্র মন্ডলের মেয়ে শ্রাবন্তী মন্ডলের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরে দুজনের সম্মতিতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে শ্রাবন্তী মন্ডলের নতুন নাম রাখা হয় জান্নাতুল ফেরদাউস। পরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দৌলতখানে ফিরে আসেন তারা।

গত শুক্রবার স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মিলে জোরপূর্বক নববধূকে তার পরিবারের কাছে তুলে দেয়। ওই সময় নবধূর কান্নার দৃশ্য কেউ গোপনে মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। ঘটনার দিন রাতে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যায়। ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পরই গা ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্ত প্রভাবশালীরা। যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে শ্রাবন্তী মন্ডল নিখোঁজ হওয়ার পর তার বাবা শংকর চন্দ্র মন্ডল বাদী হয়ে অপহরণের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ওই মামলার ঘটনায় শ্রাবন্তীকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, শ্রাবন্তী মন্ডল ওরফে জান্নাতুল ফেরদাউস কান্না জড়িত কণ্ঠে বলছিলেন- সে তার বাবা মায়ের কাছে যাবে না। কামরুল তার স্বামী, তার কাছেই থাকবে সে। এসময় গিয়াস উদ্দিন নামক এক স্থানীয় কাউন্সিলরের পা-ধরে কান্না করতে দেখা যায় তাকে।

অন্যদিকে নওমুসলিম বধূকে তার স্বামীর বাড়ির থেকে হিন্দু বাবা-মায়ের কাছে তুলে দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে গত সোমবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার ‘মেয়ারহাটের সর্বস্থরের জনগণ’ নামে একটি ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণঅবস্থান করে এলাকাবাসী। যেখানে ওই নববধূকে টাকার বিনিময়ে জোরপূর্বক পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দাবি জানানো হয়।

কামরুল ইসলাম জানান, ‘আমি যদি অপহরণ করে থাকতাম আমার স্ত্রীকে নিয়ে আমি লুকিয়ে থাকতাম। তাকে নিয়ে স্থানীয় সালিসে যেতাম না। আমার স্ত্রী সবার সামনে চিৎকার করে বলছে- সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। তারপরও কেউ আমাদেরকে সাহায্য করতে আসেনি।’ কামরুল ইসলাম দাবি করেন, তার স্ত্রীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। তা ভোলা নোটারি পাবলিকে রয়েছে।

এ বিষয় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও দৌলতখান থানা পুলিশ জানায়, সনাতন ধর্মাম্বলীর মেয়ে শ্রাবন্তী রানী মন্ডলের সাথে কামরুলের প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরে শ্রাবন্তীর বয়স সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য দিয়ে মোকাম ভোলা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে অ্যাফিডেভিট করে। কিন্তু ভিকটিমের জন্ম ও পিএসসির সনদ অনুযায়ী বয়স ১৫ বছর ২ মাস। ফলে ধর্মান্তরিত হওয়া ও তাদের বিয়ের কোনো ভিত্তি নেই।

দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলুর রহমান জানান, মেয়েটি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় আইনত তাদের ধর্মান্তরিত ও বিয়ের বৈধতা নেই। তাই ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর কেউ যদি এ ঘটনায় বাণিজ্য করে থাকে, অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877